ভাবসম্প্রসারণ


ভাবসম্প্রসারণ




ভাবের সুসঙ্গত সার্থক প্রসারণই ভাবসম্প্রসারণ। আবৃতকে উন্মোচিত, সংকেতকে নির্ণীত করে তুলনীয় দৃষ্টান্ত ও প্রবাদ বচনের সাহায্যে সহজ ভাষায় ভাবের বিন্দুকে বিস্তার করার নাম ভাবসম্প্রসারণ।

১. অর্থসম্পতির বিনাশ আছে কিন্তু জ্ঞানসম্পদ কখনো বিনষ্ট হয় না
২. অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে
তব ঘৃণা যেন তারে তৃন সম দহে।
৩.অসি অপেক্ষা মসি অধিকতর শক্তিমান।
৪.আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে
আসে নাই কেহ অবনী ‘পরে
সকলের তরে সকলে আমরা
প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।
৫.উত্তম নিশ্চিন্তে চলে অধমের সাথে ,
তিনিই মাধ্যম যিনি চলেন তফাতে।
৬. এ জগতে হায় সেই বেশী চায় আছে যার ভূরি ভূরি,
রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি ।
৭. গ্রন্থগত বিদ্যা আর পরহস্তে ধন
নহে বিদ্যা সহে ধন হলে প্রয়োজন।
৮.চরিত্র মানুষের অমূল্য সম্পদ।
৯.তুমি অধম , তাই বলিয়া আমি উত্তম না হইব কেন ?
১০.দুর্নীতি জাতীয় জীবনে অভিশাপস্বরূপ।


গ্রন্থগত বিদ্যা আর পরহস্তে ধন, নহে বিদ্যা সহে ধন হলে প্রয়োজন।


ভাবসম্প্রসারণ :- যে বিদ্যা মানুষের কাজে লাগে ,যে বিদ্যার ব্যবহারিক প্রয়োজন রয়েছে সে বিদ্যা সার্থক। যে জ্ঞান বিদ্যা মানুষের কোনো কাজে আসে না এবং শুধু পুস্তকেই সীমাবদ্ধ থাকে সে জ্ঞান বা বিদ্যার কোনো প্রয়োজন নেই। বস্তুত গ্রন্থসর্বষ বা কেতাবি বিদ্যা মানুষের কোনো প্রয়োজনে আসে না। বিদ্যা এবং ধনের সার্থকতা নির্ভর করে মানুষের প্রয়োজন মেটানোর ওপর। পার্থিব জীবনে ধন-সম্পদ ও বিদ্যার গুরুত্ব অপরিসীম। প্রন্থ বা বইপুস্তক পাঠের মাধ্যমে আমরা সাধারণত বিদ্যার্জন তথা জ্ঞানলাভ করে থাকি। কিন্তু শুধু পুথিগত জ্ঞানলাভ করলে শিক্ষা সমাপ্ত হয় না। বইয়ে যে বিদ্যা সঞ্চিত থাকে মানুষ চর্চার মাধ্যমে তাকে আত্নস্থ করে এবং মানুষের বিকাশ ঘটায়। গ্রন্থপাঠ থেকে অর্জিত বিদ্যা যদি আমরা আমাদের ব্যবহারিক জীবনে যথার্থ কাজে লাগাতে না পারি , তার যদি প্রয়োগমুখিতা না থাকে ,থাহলে সে বিদ্যা বা জ্ঞান মূল্যহীন , নিরর্থক। সে বিদ্যাকে পরের হাতের ধন সম্পদের সঙ্গে তুলনা করা যায়। অপরের অধিকৃত সম্পদে আমাদের কোনো অধিকার নেই , কারণ প্রয়োজনে তা আমরা ব্যহার করতে পারি না। ফলে সে সম্পদ যেমন আমাদের কাছে মূল্যহীন , তেমনি চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়ন করেও যদি আমরা রোগ নির্ণয় ও প্রয়োজনীয় ওষুধের ব্যবস্থাপত্র দিতে না পারি অথবা ্আমাদের অর্জিত জ্ঞানকে যদি প্রাত্যহিক জীবনে কাজে লাগাতে না পারি , তাহলে আমাদের সে বিদ্যাও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। এ প্রসঙ্গে চাণক্য পণ্ডিতের মন্তব্যটি প্রণিধানযোগ্য , পপুথিতে যে বিদ্যা থাকে আর পরেরর হাতে যে ধন থাকে দুটিই সমান। দরকারের সময় সে বিদ্যা বিদ্যা নয়। সে ধন ধন নয়। তাছাড়া যে জ্ঞান ব্যবহারিক জীবনে কোণো কাজে আসে না , সে জ্ঞান দ্বারা নিজেরও যেমন কোনো উপকার হয়নাপ , তেমনি জগতেরও কোনো কল্যাণ সাধিত হয় না। সুতরাং সার্থক ও সুন্দর জীবনের জন্যে বিদ্যাকে বুদ্ধি দ্বারা আত্নস্থ করে বাস্তবের সঙ্গে সংংযোগ করা দরকার এবং ধন স ম্পত্তি অন্যের কাছে অহেতুক গচ্ছিত না রেখে নিজের আয়ত্বে রাখা দরকার , যেন প্রয়োজনে সময় নিজের কাজে , লাগানো যায় এবং দেশ ও দশের মঙ্গলে বা স্বার্থে সাহায্য করা যায়। গ্রন্থগত বিদ্যা যা আত্নস্থ করা হয় নি এবং অন্যের ধন যা স্বীয় করায়ত্ত হয় নি -- এ সবই নিরর্থক। কারন প্রয়োজন মূহুর্তে এগুলো যথাযথ ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। প্রকৃতপক্ষে যে-বিষয়টি আত্নস্থ করা যায় না , নিজের অধিকারে ও ব্যবহারে আনা যায় না তা যতই সমৃদ্ধ হোাক তাতে মানুষের কোনো উপকার হয় না।